নারায়ণগঞ্জ জেলাপ্রতিনিধিঃ--ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গায়ে কেরোসিন তৈল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন শিরিন খান নামের এক নারী। ওই নারীর নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনার পেছনে রয়েছে জমি নিয়ে বিরোধ। তবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান সাউদের পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বারগাঁও এবং রূপগঞ্জ উপজেলার বরপা এলাকায় গিয়ে এ নিয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা হয়।
বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার অভিযোগে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঘুমের ওষুধ সেবন করে দুই সন্তানসহ গায়ে কেরোসিন তৈল ঢেলে আগুন দিয়ে শিরিন খান আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে আগুন দেওয়ার আগেই পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ বরপা এলাকার জুনায়েদ আহমেদ খানের স্ত্রী শিরিন খান (৩৫)। তিনি মেয়ে শারমিন খান (১৬) ও ছেলে জহির খানকে (১০) নিয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে এমন কাণ্ড ঘটান।
ভুক্তভোগী শিরিন খানের নিজ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিবদমান জমির ওপর দোতলা বাড়ি রয়েছে শিরিন খানের। সেখানে পুরো পরিবারই বর্তমানে বসবাস করছে।
শিরিন খানের বাবা মোতালেব (৭২) জানান ‘১০ বছর আগে আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাই সাদিপুরের বারগাঁও এলাকায় ৬ শতাংশ জমি কিনেছে জহিরুল হক জয় (প্রবাসী) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। কিন্তু জমির পাওয়ার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) হান্নান সাউদের কাছে ছিল। জহিরুল হক ব্যাংক থেকে অনেক টাকা লোন নেয়। ছয় মাস আগে ব্যাংক থেকে চাপ দিলে বিষয়টি নিয়ে সুরাহা করতে দেন–দরবার শুরু হয়।
শিরিন খান সন্তানদেরসহ ঘুমের ওষুধ সেবন বিষয়ে জানতে চাইলে মোতালেব আরও বলেন, ‘আমার নাতি অসুস্থ না, সে সুস্থ। আর হান্নান সাউদ আমার মেয়ের বাড়ি দখল বা ভাঙচুর কিছুই করেনি। জায়গা দখল করতেও চায়নি হান্নান। মূলত আগামী ২রা নভেম্বর মেয়ে ওমরা হজে যেতে চায়। তার আগেই মেয়ে চেয়েছিল ঝামেলা শেষ করতে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুপগঞ্জের বরপা এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় তারাব পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হান্নান সাউদের ছেলে ইউসুফ সাউদ (৩৯) বলেন, আমার বাবা জায়গার ব্যবসা করতো। জহিরুলের কাছ থেকে জায়গা পেয়ে নিজে তিনি শিরিনের কাছে জায়গা বিক্রি করেন অন্তত ১০ বছর আগে। ছয়মাস আগে বেসিক ব্যাংক কাওরান বাজার শাখা থেকে খবর আসে এই জায়গার ওপর ঋণখেলাপি আছে। আমার বাবা তো এই বিষয়ে কিছুই জানতো না। পরে স্থানীয়ভাবে সালিসে বসে জানা যায়, জহিরুল হক জয় এই জায়গাসহ অন্তত ছয়টি জায়গার ওপর ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোন নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। মাঝে ফেঁসে যায় আমার বাবা।’
ইউসুফ সাউদ আরও বলেন, ‘দুই মাস আগে এই বিষয়ে সালিস বসলে আমার বাবা বলে—এটা সমাধান করা যাবে, কিন্তু আমাকে সময় দিতে হবে। কারণ ব্যাংক ছয়টা জমির মালিককে একসঙ্গে বসিয়ে সমস্যার সমাধান করতে বলেছে। কিন্তু শিরিন খান সময় না দিয়ে বারবার পুলিশ ডাকে। গত ২০ অক্টোবর তালতলা তদন্ত কেন্দ্রে সে একটা মিথ্যা অভিযোগও দিয়েছিল। এই ঘটনায় পুলিশ এসে বলেছিল জায়গা জমির বিষয় আপনারা আদালতের মাধ্যমে সমাধান করেন। কিন্তু সে এসব মানতেই চায় না। গত শুক্রবার তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশের সামনে আমার বাবা শিরিনকে বলেছে—তোমার যদি জায়গা নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে জায়গা আমার কাছে বিক্রি করে দাও। আমিই এই সমস্যা মোকাবেলা করব। শনিবার বেলা ৩টায় এটা নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু সে তো আরেক কাণ্ড ঘটিয়ে বসলো।
এই বিষয়ে সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান বলেন, শিরিন খান নামের ওই নারী আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। সেটা সমাধানের আগেই সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তাছাড়া তার বাবাই বলছে এমন কিছু ঘটেনি। যেটা ঘটেছে সেটা আদালতের মাধ্যমেই সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল,এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।