মোঃ শামীম হোসেন- খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ-
ড্রেন নির্মাণ, সড়ক মেরামত, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মতো উন্নয়ন কাজ চলছে খুলনা মহানগরী জুড়ে। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি), খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে। কেসিসির কাজ শেষ হতে এক বছরের বেশি সময় লাগলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের লাগবে আড়াই বছরের বেশি। অন্যদিকে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হবে সওজের কাজ। একাধিক সংস্থা একই সময়ে কাজ করলেও কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় নেই। এক সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে মেরামত করার পর আরেক সংস্থা ফের কাজ শুরু করছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খনন করা ড্রেনের মাটির স্তূপ সড়কজুড়ে। যার পাশে আবার ড্রেন থেকে তুলে রাখা হয়েছে বর্জ্য। আর ইটবালুসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ও সরঞ্জাম সড়কের অর্ধেক জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পথচারী ও যান চলাচল। ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। খুলনা মহানগরীর ব্যস্ততম আহসান আহমেদ রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, টুটপাড়া মেইন রোড, লোয়ার যশোর রোড, শামছুর রহমান রোড, পূর্ব বানিয়া খামার, বি কে মেইন রোড, বড় মসজিদ থেকে ডি আলী প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত চলছে ঢালাই ড্রেনের কাজ। ড্রেনের জন্য সড়কের একপাশের মাটি তুলে রাখা হয়েছে সড়কের ওপর। তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সড়কজুড়ে। ফলে যান চলাচল তো দূরের কথা হেঁটেও যেতে পারছে না মানুষ। অনেক এলাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে স্কুল কলেজ মাদরাসায়ও যেতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা। সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু টুটপাড়া ফরিদ মোল্লার মোড়, জিন্নাহ পাড়া মেইন রোড, পশ্চিম বানিয়া খামার বিকে মেইন রোড, জাহিদুর রহমান সড়ক, দোলখোলা মতলেবের মোড়, সরকারি বি এল কলেজ রোড, মুজগুন্নি আবাসিক এলাকা, রূপসা নতুন বাজার এলাকা, নিরালা ১ নম্বর সড়ক, শেরেবাংলা রোডসহ নগরীর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চলছে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ। এসব কাজ ২০২৩ সালে শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ এলাকা ঘেরাও করে কাজ করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না কোথাও। নির্মাণ এলাকার দুই মাথায় দুটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দায় সেরেছেন ঠিকাদাররা। মাসের পর মাস ধরে প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম শ্রমিক নিয়ে দিনের পর দিন কাজ করে চলেছেন তারা। এসব ঠিকাদাররা এতোটাই প্রভাবশালী যে এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পায়। শুধু ড্রেনের কাজে ধীরগতি নয়, সড়ক মেরামতের কাজেও রয়েছে প্রচণ্ড ধীরগতি। নগরীর শামসুর রহমান রোড, বিকে রায় রোড, মিয়াপাড়া রোডসহ অধিকাংশ রোডের ওপর ইটের খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। বৃষ্টিতে ইটের খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়কে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। নগরীর টুটপাড়া মেইন রোড এলাকার বাসিন্দা আবু হাসান বলেন, ‘টুটপাড়া কবর খানা থেকে রূপসা পর্যন্ত মেইন রোডের কাজ শুরু হয়েছে আরও কয়েক মাস আগে। টুটপাড়া কবর খানার সামনের সড়কের ড্রেন নির্মাণের জন্য কয়েক মাস ধরে সড়কটি একেবারেই বন্ধ। এ এলাকার বাসিন্দাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে গেছে। বাসা থেকে বের হলেই কাদামাটি না মেখে বাসায় ফিরে আসা যায় না। ড্রেনের জন্য মাটি রাস্তায় তুলে রাখলেও তা সরানোর কোনো নামগন্ধও নাই। এদিকে কোথাও কোথাও চলছে খুলনা ওয়াসা সুয়ারেজ লাইন স্থাপন ও ওয়াসার পানির সংযোগ স্থাপনের কাজের খোঁড়াখুঁড়ি। ২ হাজার ২৫ কোটি টাকার এ কাজ চলবে ৩০ মাস ধরে। কিন্তু করপোরেশন এলাকায় চলমান এসব কাজ একই সঙ্গে চললেও কোনো সমন্বয় নেই কারও মধ্যে। সব কাজই চলছে ধীরগতিতে। রাস্তা খুঁড়ে লাইন স্থাপনের পর মাটি দিয়ে ভরাট করেই শেষ ওয়াসার কাজ। একদিনের মাথায় সেই মাটি দেবে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে যান বাহন ও জনগণের চলাচলে বিঘ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে চলতে না পেরে অনেকেই ফুটপাতে বাইক চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া খুলনার ময়লাপোতা থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আজও শেষ হয়নি। এ প্রকল্পের কাজ এতোটাই ধীরগতিতে চলছে যে এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সড়কটির কাজ শেষ হতে আরও ৮-৯ মাস সময় লাগবে বলে জানা গেছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নগরীতে বর্তমানে ২১১টি ড্রেন, খাল ও স্লুইচগেটের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া ৫৭১টি সড়কে পর্যায়ক্রমে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সড়কের কাজ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরে সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব উন্নয়ন কাজ ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ বলেন, ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ চলতি বছর শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ৩০ মাস। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ময়লাপোতা থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত কাজ করোনার কারণে দেরি হয়েছে। এ কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।