ছুটির দিনে ভ্রমণঃ ০১
লোকেশনঃ তিস্তা ব্যারেজ।
তারিখঃ ২৬ জানুয়ারী ২০২৪ ইং
রাইডঃ ২৪৮ কি.মি
গত ২৫ জানুয়ারী আমাদের পরিকল্পনা হয় আমরা সারাদেশে ভ্রমণ করবো। ঠিক করলাম তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ শে জানুয়ারি শুক্রবার ছুটির দিনে আমরা ভ্রমণ করব এটাই আমাদের প্রথম ট্রিপ। পরিচয়টা দিয়ে নেই এর ফাকে- আমি পারভেজ একজন জার্নালিষ্ট এবং মানুষের সেবার জন্য একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালনা করি। আমার সংস্থার নাম “আমার ঠিকানা বাংলাদেশ ” এবং সাথে আছে কেয়া সে একজন ডাক্তার। আমরা দুজনেই খুব ভালো বন্ধু।
এবার গল্পে যাওয়া যাক। ভ্রমণ করা আমাদের দুজনেরই খুব নেশা। ২৬ জানুয়ারি শীতের দিনে সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠলাম উঠে ঠান্ডা এবং গরম পানি মিক্সড করে গোসল করলাম। গোসল শেষে একটু আগুনের কাছে গেলাম আগুন পোহাতে। সেই সাথে কাপড়-চোপড় গুলো একটু গরম করে নিলাম যাতে শরীরে দিতে একটু আরাম হয়। এর ফাঁকে কেয়া কে আগে একটা কল দিলাম রেডি হওয়ার জন্য যেন আমি যেতে যেতে সে রেডি হয়ে থাকে। এরপর আমি রেডি হয়ে সকালের খাওয়া-দাওয়া টা সেরে নিলাম তারপর বাইকটা বের করলাম পাঁচ মিনিট স্টার্ট করে ইঞ্জিনটা ফ্রি করে নিলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলাম বাহিরে অনেক কুয়াশা এবং সেই তো অনেক ঠান্ডা ভাবলাম এই ঠান্ডায় কিভাবে বাইক চালিয়ে এতদূর জার্নি করব ভাবতে শরীরটা শিউরে উঠছে। তো যথারীতি কাকে কল দিয়ে আমি রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম কারণ রংপুর থেকে কেয়াকে পিক করে নিতে হবে। রাস্তাঘাটে সমস্যার কারণে রংপুর পৌঁছাতে আমার প্রায় এগারোটা বেজে গেল। আমি গিয়ে দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কেয়া। দেরি হওয়ার কারণে যদিও বা সে একটু রাগ করলো কিন্তু কিছু করার নাই যেতেই হবে আমাদের বহুদূরের পথ। কেয়া পিছনে বসলো বাইকের। সেখান থেকে আমরা রওনা হলাম পাগলাপীর হয়ে যেতে হবে আমাদের। আজকের ভ্রমণটা একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা নিয়েই শেয়ার করা আপনাদের। কিছু দূর গিয়ে তেলে পাম্পে আমরা তেল ভরলাম গাড়িতে। শীতে ঠান্ডার কারণে একবার কেয়া ড্রাইভিং করলো একবার আমি। কিন্তু যখন কেয়া বাইক চালাচ্ছিল তখন লোকজন আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। সেদিকের মেয়েরা যে বাইক চালায় না এটা আর বোঝার বাকি নেই। এভাবেই প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ মোটরসাইকেল ড্রাইভিং করে আমরা তিস্তা ব্যারেজ পৌঁছালাম। গিয়ে দেখলাম তিস্তা ব্যারেজের পানি একদম শুন্য পানি নেই বললেই চলে আবার দর্শনার্থীর আনাগোনা সেরকম নেই, একদম খুবই কম। আমরা প্রথমে শেষ সীমানায় বাইক রেখে নীচে নেমে পাথরের উপর হাটাহাটি করলাম। বিভিন্ন ছবি তুললাম পাথরের উপর বসে, দাড়িয়ে। এরপর সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম ব্রিজের উপর সেখানে ঘুরাঘুরি করে বালুচরের উপর কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম। সেখানে একটা বিষয় আমরা দুজনেই লক্ষ্য করলাম শুকনো বালুচরের উপর তারা সেচ পাম্প দিয়ে পানি দিয়ে গম আবাদ করছে। বিষয়টি সত্যি দারুন একটা অবাক করার মতো। সেখানে তাদের সাথে কথা বললাম অনেক ভালো লাগলো। যদিওবা পানি নেই কিন্তু হালকা হাঁটু পানি থাকার কারণে আমি আর কেয়া গেট অব্দি পৌঁছাতে পারিনি। তবে জায়গাটা ভীষণ সুন্দর লেগেছিল। এবার অনেক ঘুরাঘুরি করে ফেরার পালা। যথারীতি বাইক রাইড করে আমরা রওনা হলাম রংপুরের উদ্দেশ্য। কিন্তু মাথায় চিন্তা ঢুকলো অন্য। বাজেট দুজনার কাছে ছিল কম। টাকা পয়সা শেষ করে ফেলেছি এর মধ্যে। আমি আর কেয়া ভাবছি – যদি অর্ধেক রাস্তায় পেট্রোল শেষ হয়ে যায় তাহলে কিভাবে বাড়ি যাবো? এই চিন্তা আর গল্প করতে করতে নীলফামারীর জলঢাকা পার হলাম। যেই ভাবনা সেই সত্য হলো- জলে পার হয়ে বাইকের তেল শেষ। আমরা দুজনেই পড়ে গেলাম মহা চিন্তায় পাগলাপীর তখনও বহুদূরে। রাস্তায় দাড়িয়ে চিন্তা করতে করতে বাইক টা বাকা করলাম। একপাশের তেল গড়িয়ে এ পাশে আসলো। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পরে আবার স্টার্ট নিয়ে আমরা চললাম। ততক্ষণে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা বাতির ডাক দিচ্ছে। সূর্য মামা তো সকাল থেকেই নেই তবু্ও দিনের আলো গড়িয়ে অন্ধকার নেমে আসছে। রাস্তায় হটাৎ স্টার্ট বন্ধ। চিন্তার কিছু নেই- বাইকের তেল শেষ। পাগলাপীর তখনও ৬ কিলোমিটার দূরে। বাইকটা সাইড করে কেয়া কে বললাম “চল গিয়ে চা খাই” কপালে যা আছে হবে। কথামতো কেয়াও চললো চা খাইতে। আমার কাছে আর কোনো টাকা নেই – কেয়ার পার্সে ১৫/- টাকার মতো আছে। তা দিয়েই হবে। দোকানে গিয়ে চারটা পিয়াজু খেলাম ১০ টাকা দিয়ে। আর দোকানী সেজেই দুইটা চা দিলো। চিন্তা করলাম চায়ের বিল দিবো কিভাবে। যাই হোক আগে খেলা নেই পরে দেখা যাবে। চা খেতে খেতে একজন পরিচিত কে কল দিলাম টাকার জন্য। তিনি একটু সময় চেয়ে নিলো – যথারীতি ১০/১৫ মিনিট পড়ে ১৯৫/- টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিলেন তিনি। সেটা বিকাশের দোকান থেকে বের করে পাগলাপীর পর্যন্ত হেটেই গেলাম। তারপর পাম্প থেকে ১২০ টাকার তেল নিলাম। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। শীতের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। হোটেলে বাকি টাকা দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে আমরা আবার রওনা দিলাম নিজের ঠিকানায়। রংপুরে ওকে নামিয়ে দিয়ে আমি শীতের মধ্যেই বাইক চালিয়ে নিজের গন্তব্য আসলাম। আমার বাড়ি আসতে ৯.৩৬ মিনিট বেজে গেছে। পরে গাড়ি রুমে উঠিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিলাম। পরে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে জানতে পারলাম রাতে কেয়ার পায়ের ব্যাথায় জ্বর আসছিলো। এখন অপেক্ষা করছি পরবর্তী ভ্রমণের জন্য।
দিনশেষে একটাই কথা ” ভ্রমণ করলে জ্ঞান অর্জন করা যায়। মন ও শরীর দুটোই ফ্রেশ থাকে।