ফ্রান্স থেকে জলবায়ু তহবিল হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (এক বিলিয়ন ডলার) সহায়তা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা এ তথ্য জানান। একনেক বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এদিকে একনেক বৈঠকের শুরুতে পরিকল্পনা কমিশন ও ইআরডিতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্টে জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) প্রকাশনার মোড় উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সংগঠনের সভাপতি হামিদ-উজ-জামানের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ‘স্টেট অব দ্য ডেভেলপমেন্ট : ইমপ্যাক্ট অব মেগা প্রজেক্টস’ শীর্ষক বই প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। একনেক বৈঠকে মোংলা বন্দরের উন্নয়নসহ ১৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে ১৮ হাজার ৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১২ হাজার ৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে পেতে যাওয়া জলবায়ু তহবিলের এ ফান্ড থেকে প্রকল্প নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সুন্দরবন রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী জলাভূমিতে রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে সঠিক উচ্চতায় কালভার্ট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে পানি চলাচল সহজ করার দিকেও নজর দিতে বলেছেন তিনি। সেতুর নকশা সঠিকভাবে করার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ওয়াসার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ওয়াসার পানি উৎপাদন ও বিতরণ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করতে হবে। পানির অপচয় রোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। পানির ট্যাপ খুলে রেখে সেভ করা যাবে না। এছাড়া করসংক্রান্ত মামলাগুলো সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ ইমদাদউলা মিয়ান এবং আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকী, একেএম ফজলুল হক প্রমুখ।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো-জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্প; ফেনী (মোহাম্মদ আলী বাজার)-ছাগলনাইয়া-করেরহাট সড়ক প্রশস্তকরণ এবং ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতু নির্মাণ; সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের সড়ক সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্নির্মাণ; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫নং গুদারাঘাটের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদম রসুল সেতু নির্মাণ; গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন; রায়েরবাজার এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ; সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে মাজার মসজিদ নির্মাণ; মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন; চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল এবং কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন; হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প; সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত); কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজ সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্প; মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন; মেঘনার শাখা নদীর ভাঙন থেকে হিজলা উপজেলার পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প; শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা প্রকল্প; অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত); বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প; উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প।