প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়-এমন কোনো সংবাদ প্রচার না করার জন্য সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার তার কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও আহত ৪৩৮ সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রায় ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণকালে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সব সময় গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। কারণ, এতে আমরা নিজেদের সংশোধন করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম অবশ্যই সরকারের সমালোচনা করবে এবং স্বাধীনতা ভোগ করবে, তবে তা যথাযথ দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে করা উচিত। গঠনমূলক সংবাদ সরকার চালাতে সাহায্য করে। তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা (দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার কারণে) আর বাধাগ্রস্ত হবে না।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্যসচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারও বক্তব্য দেন। এ সময় বিএফইউজে ও ডিইউজেসহ বিভিন্ন সংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা তার সরকার বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৪ বছরে সাংবাদিক সমাজ যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করেছে, এর আগে তা কখনোই করেনি। গণমাধ্যমকে যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তা দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরে আরও সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটিমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল-বিটিভি। এখন তার সরকার মূলত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতে অনেক টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রকে লাইসেন্স দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনতে যাচ্ছে। তিনি সংবাদমাধ্যম মালিকদের বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে অর্থ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, সাংবাদিকরা নিজেদের জন্য বাড়ি করতে চাইলে সরকার জমির ব্যবস্থা করতে পারে অথবা কিস্তিতে সরকারি ফ্ল্যাট দিতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিক করা হবে-প্রধানমন্ত্রী : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৪ হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতালে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ঢাকা মেডিকেলকে সুন্দর, আধুনিক এবং বড় হাসপাতালে পরিণত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। এই হাসপাতাল থেকে যাতে একই সময় ৪ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর তার অফিস থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন। ডিএমসি অ্যালামনাই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. জুলফিকার রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার সংখ্যা আমাদের দেশে কম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুষ্টিমেয় সংখ্যক ব্যক্তি চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বলেন, কাজেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার প্রতি আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিস্তারিত গবেষণার জন্য যে পরিমাণ তহবিলের প্রয়োজন, আমি আপনাদের তা দেব।
প্রধানমন্ত্রী রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীরা সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে।
এ সময় শেখ হাসিনা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বেশ কয়েকটি জেলা হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের অভাবে কোনো অস্ত্রোপচার করা হয় না। এছাড়া অনেক আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তিনি চিকিৎসকদের গ্রামীণ এলাকায় না থাকার মানসিকতার সমালোচনা করে বলেন, এ কারণে গ্রামের লোকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সবাই (চিকিৎসক) ঢাকায় থাকতে চায়, তাদের কেউ ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। তিনি বলেন, যখন আপনাকে গ্রামে পোস্টিং দেওয়া হবে, তখন সেখানে থেকেই আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।