তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর পৌরসভার বিসিআইসির সার ডিলার আলহাজ্ব মোহাম্মাদ আলী বাবুর বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় পটাশ সার বিতরণ না করে চোরাই পথে বাড়তি দামে পাচার করছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। শনিবার দুপুরের দিকে কলমা বিল্লি রাস্তা দিয়ে সার পাচারের ঘটনাটি ঘটে। এঘটনায় কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই সাথে দাপটধারী ডিলার হাজী বাবুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন কৃষক রা। নচেৎ ডিলার ও কৃষি অফিসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিবেন পৌরসভার কৃষকরাও বলে নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরের দিকে তানোর পৌরসভার বিসিআইসির সার ডিলার আলহাজ্ব মোহাম্মাদ আলী বাবু তালন্দ বাজারের নিজস্ব গুদাম থেকে চোরাই পথে ১০০ বস্তা এমওপি সার গোপনে বড় স্টিয়ারিং গাড়ীতে করে বাধাইড় ইউনিয়নের বিসিআইসির সার ডিলার নাবিলা ট্রেডার্সে কলমা বিল্লির রাস্তা দিয়ে পাঠাচ্ছিলেন। পথে মধ্যে এত পটাশ সার দেখে আজিজপুর মোড় পার হলে স্থানীয় কৃষক রা সারের গাড়িটি আটক করেন। এসময় স্থানীয় সাংবাদিকরা দরগাডাংগা দোয়া মাহফিলে খবর সংগ্রহের জন্য যাচ্ছিলেন। সারের গাড়ি দেখে ডাইভারের সাথে কথা বলে কোথায় থেকে আসছে কোথায় যাবে এসব কথা জিজ্ঞাসা করা মাত্রই ডিলার হাজী মোহাম্মাদ আলী বাবু লুঙ্গি পরে বাইক নিয়ে উপস্থিত হন। হয়েই তিনি ডাইভারকে উচ্চকন্ঠে বলেন গাড়ীর সামনে যে দাড়াবে তার গায়ের উপর দিয়ে তুলে দিবা বলে নানান ধরনের গালমন্দ করেন।
ডিলার হাজী মোহাম্মাদ আলী বাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয় পৌরসভার কৃষক রা পটাশ সার পাচ্ছেন না, আপনি কিভাবে বাধাইড় ইউনিয়নের ডিলারের কাছে দেন তিনি জানান, আমার ক্ষমতা আছে দিচ্ছি কিছু করার থাকলে করে নিও বলে প্রচুর দাপট দেখান।
নাবিলা ট্রেডার্সের প্রোপাটার সেলিম জানান, কৃষি অফিস থেকে বলেছে যে ভাবে হোক সার আনো। এজন্য মোহাম্মদ আলী বাবু বরাদ্দের বাহিরে সার এনে দিচ্ছে। নির্ধারিত মূল্যে নাকি বাড়তি দামে জানতে চাইলে তিনি জানান বরাদ্দের বাহিরে সার মানেই বাড়তি দাম দিয়ে আনতে হয় এটা সবার জানা।
সুত্র মতে, জুলাই মাসে পৌরসভার ডিলার ৮২ বস্তা পটাশ সার বরাদ্দ পায়। তাহলে ১০০ বস্তা পটাশ সার ডিলার বাবু কোথায় পেল, কিভাবে নিয়ে এলেন এসব নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ডিলার বাবু নিয়োমিত সার দিনে রাতে সমান তালে পাচার করেন। আবার অন্যরা সার আনলে মিডিয়া কর্মী কে খবর কিংবা অফিসকে জানিয়ে হেনেস্থা করতে উঠেপড়ে লাগেন। এক এলাকার বিসিআইসির সার ডিলার অন্য এলাকায় দেয়ার কোন এখতিয়ার নেই। কিন্তু হাজী বাবুর কাছে কোন নিয়ম লাগেনা।
পৌরসভার একাধিক কৃষকরা জানান, বাবু পৌরসভার শেষ প্রান্ত তালন্দ বাজারে তার ডিলার পয়েন্ট। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৯ টি সাব ডিলার। কিন্তু সাব ডিলার ও কৃষক কে সার দিতে চান না এবং অশালীন আচরন করে থাকেন। তার দোকানে গেলেই আজ নাই কাল আস, কাল নাই পরশু আস এমন তালবাহানা সব সময়। দোকানও সারাদিন খোলা থাকেনা। সকাল ১০ টার মধ্যে বন্ধ করে আবার বিকেল চারটার সময় খুলে সন্ধ্যার সময় বন্ধ করে দেয়। আমাদের নাম প্রকাশ করলে যেটা পেতাম সেটাও পাব না। ন্যায্য দামে কেউ পটাশ সার দেয়না। তাদের একটাই কথা বাড়তি দামে এনেছি বাড়তি টাকা দিলে পাবে না দিলে পাবে না। যদি পটাশ সার সংকট হয় তাহলে বাড়তি টাকা দিলে কেন সার মিলে। কৃষি অফিস ও উপজেলা প্রশাসন বা বাজার মনিটরিংয়ের লোকজন ঠান্ডা রুমে ঘুমিয়ে থেকে ডিলারদের সিন্ডিকেট করার সুযোগ করে দিচ্ছেন বলেও কৃষক দের অহরহ অভিযোগ।
পৌরসভার উপসহকারী কর্মকর্তা (বিএস) এমদাদ জানান, জুলাই মাসে ডিলার বাবু ৮২ বস্তা পটাশ সার বরাদ্দ পেয়েছিল। বাকি সার সে কোথায় থেকে এনেছে আমার অজানা। ৮২ বস্তা পটাশ সার কৃষক দের মাঝে বিতরনের তালিকা দেখেছেন কি জানতে চাইলে তিনি জানান এসব দেখার দায়িত্ব স্যারদের, আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিবে সে ভাবে কাজ করব।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, যেহেতু সরকারী ভাবে বরাদ্দ কম। এই বরাদ্দে কৃষকদের চাহিদা পূরন হচ্ছে না। এজন্য ডিলারদের বলা আছে যে ভাবে হোক সার নিয়ে আসেন। একজন বিসিআইসির ডিলার সার এনে কৃষকদের না দিয়ে ডিলারকে দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষকদের দিতে হবে, ডিলারদেরকে দিতে হলে অনুমতি নিতে হবে। ডিলার হাজী মোহাম্মাদ আলী বাবু কি অনুমতি নিয়েছেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন অনুমতি নেয়নি তাকে সতর্ক করা হবে, দ্বিতীয় বার যেন এমন কাজ না হয় বলে এড়িয়ে যান তিনি ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেনকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি বলেন, যে কৃষক সার পায়নি আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন এবং পাচারকারী বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা উপপরিচালক (ডিডি) মাজদার হোসেন বলেন, এভাবে একজন ডিলার আরেক ডিলারকে সার দিতে পারেন না। যদিও প্রয়োজনে দেয়া লাগে তাহলে কৃষি অফিসের অনুমতি নিতে হবে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।