খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ- অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ দেয়াসংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে মোংলা বন্দরের ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। এতে বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ, বেড়েছে ব্যয়। মোংলা বন্দরে সম্প্রতি শেষ হয়েছে আউটারবার ড্রেজিং প্রকল্প। এতে বড় বড় জাহাজ বন্দর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া পর্যন্ত আসতে পারছে। এখন চলছে ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারবে। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে, সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে দেড় শ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজটি এগোচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, খুলনা জেলা প্রশাসন ও জমির মালিকদের সমন্বয়হীনতার কারণে খুলনার দাকোপ উপজেলার বানীশান্তায় ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ফেলার কাজ আটকে আছে। এই অবস্থায় চলমান এ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় দুটোই বেড়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ৩০ জুন। অথচ এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৪৬ ভাগ। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বন্দরসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোংলা বন্দরের ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ফেলতে পশুর চ্যানেলের পশ্চিম পাড়ে বানীশান্তায় ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এলাকাটি খুলনা জেলায় পড়ায় ওই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খুলনা জেলা প্রশাসককে বুঝিয়েও দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জমির সব মালিককে ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেয়নি। নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিয়ে বালু ফেলার উপযোগী করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করবে। তারপর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরের কার্যক্রমের পাশাপাশি সহজ হবে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইপিজেড, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, বাগেরহাটের রামপালে খানজাহান আলী বিমানবন্দর, খুলনা-মোংলা রেললাইনের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ট্রানজিটও সহজ হবে।
অবশ্য খুলনার জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারের দাবি, তিনি জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করেছেন। কয়েকজনকে টাকা বুঝিয়েও দিয়েছেন। বাকিরা এখনো আবেদনই করেননি। এ কারণে ক্ষতিপূরণ দেয়া যাচ্ছে না। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) এবং ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প পরিচালক মো. শওকত আলী বলেন, ‘বন্দরের ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের কাজটি ২০২১ সালের মার্চে শুরু হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯৪ কোটি টাকা। হাড়বাড়িয়ার পর জয়মনিরঘোল থেকে শুরু করে এ খনন কাজ হবে বন্দর জেটি পর্যন্ত। ইতিমধ্যে চ্যানেলের জয়মনি-চিলা এলাকায় অধিগ্রহণ করা জমিতে বালু ফেলা হয়েছে, খনন কাজও শেষ। পশুর নদীর পূর্ব পাড়ে অধিগ্রহণ করা জয়মনি-চিলার সব জায়গা ভরাট হলেও পশ্চিম পাড়ে খুলনার দাকোপের বানীশান্তায় বালু ফেলার কাজ শুরুই করা যায়নি। সেখানে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ বাবদ বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ৮ জুন প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খুলনা জেলা প্রশাসককে বুঝিয়ে দিয়েছে। এরপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও জমির সব মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তর করা হয়নি। এ কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন, মোংলা বন্দর শিল্প এলাকার ওমেরা এলপিজিসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইস্ট কোস্ট গ্রুপের কর্ণধর আজম জে চৌধুরী এবং মোংলা বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সেন্টু বলেন, ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না গেলে জাহাজ জেটি পর্যন্ত আসতে পারবে না। ফলে বন্দরটি পুরোমাত্রায় সচল করার উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মোংলা বন্দরসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসা বলেন, অনেক আগেই খুলনা জেলা প্রশাসককে বানীশান্তার অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে ওই জমিতে বালু ফেলার ব্যবস্থা করছেন না জেলা প্রশাসক। বুঝছি না কী কারণে তিনি সময়ক্ষেপণ করছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘ইতিমধ্যে ৯ একরের মতো জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হয়েছে। যারা আবেদন করেছিলেন তাদেরই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন কোনো ক্ষতিপূরণের চাহিদার আবেদন পেন্ডিং নেই। পরে কেউ আর আবেদন করেননি, তাই আমরা ক্ষতিপূরণ দিতে পারিনি। টাকা জমা আছে, আবেদন করলেই টাকা দিয়ে দেয়া হবে।