ওয়াগনার বাহিনীর ব্যর্থ বিদ্রোহের পর থেকে লাপাত্তা রুশ সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন।
জেনারেল সুরোভিকিন রুশ বিমান ও মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমান্ডার। রাশিয়ার ইউক্রেন অপারেশনের ডেপুটি কমান্ডার তিনি। গত বছর অক্টোবর থেকে এবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তারপর তার পদাবনতি হয়।
২৪ জুন ওয়াগনার বাহিনীর সৈন্যরা মস্কোর দিকে যাত্রা শুরু করলে এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের কমান্ড এবং ইচ্ছার’ প্রতি অনুগত থাকার জন্য জেনারেল সুরোভিকিন তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
সে সময় তার ইউনিফর্মে এমন কোনো প্রতীক ছিল না যাতে তার র্যাঙ্ক বোঝা যায়। মুখের ভাব এবং কথায় তাকে অসংলগ্ন দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তিনি যেন কোনো চাপে রয়েছেন। এর পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। কোনো খবর নেই।
মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয় ওয়াগনারের বিদ্রোহের কথা সুরোভিকিন আগ থেকেই জানতেন, এবং তার সঙ্গে সত্যিই এই বিদ্রোহের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না তা রুশ গোয়েন্দারা এখন তা তদন্ত করছে।
তবে, জেনারেল সুরোভিকিনের মেয়ে ভেরোনিকাকে উদ্ধৃত করে রুশ মিডিয়া বাজা বলেছে: তার (বাবার) কিছু্ই হয়নি। তিনি যথারীতি কাজ করছেন।
কিন্তু সুরোভিকিনের খোঁজ জানতে চাইলে ক্রেমলিন কোনো উত্তর দেয়নি। সাংবাদিকদের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
ধারণা করা হয় ওয়াগনার নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের সঙ্গে জেনারেল সুরোভিকিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলের জন্য যখন ওয়াগনার বাহিনী লড়াই করছিল, প্রিগ্রোজিন বলেছিলেন জেনারেল সুরোভিকিনই প্রতিরক্ষা দপ্তরে প্রভাব খাটিয়ে প্রয়োজনীয় অস্ত্র-সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
গত মে মাসে প্রিগোজিন বলেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার হিসাবে জেনারেল সুরোভিকিনকে নিয়োগ করা উচিৎ।
ডোসিয়ের সেন্টার নামে রুশ একটি অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান দাবি করে গোপন নথিপত্র দেখে তারা জেনেছে যে ৩০ জন সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওয়াগনারের “ভিআইপি” তালিকায় রয়েছেন, জেনারেল সুরোভিকিন তাদের একজন।
২০১৭ সালে জে. সুরোভিকিনকে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সমর্থনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
সিরিয়ায় আট মাস দায়িত্ব পালনের সময় রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ ওঠে। এমনকি রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ এবং হাসপাতালে বোমাবর্ষণের অভিযোগও ওঠে তখন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলে, জেনারেল সুরোভিকিন এবং অন্যান্য রুশ এবং সিরিয়ান কমান্ডাররা ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ইদলিব প্রদেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় জেনে-বুঝে বেসামরিক এলাকায় এবং অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালিয়েছেন।
সেসময়, রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ এবং হাসপাতালে বোমা হামলার জন্য রুশ বাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয়। রুশ সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।