আইন-কানুন মেনে সরকারি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সোমবার প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া কোনোভাবেই যেন সরকারের বিরুদ্ধে কোনো মেসেজ বা তথ্য প্রকাশ না পায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সরকারি চিঠিপত্র, আদেশ-নির্দেশ জারির আগে সতর্কতার সঙ্গে বারবার নিশ্চিত হয়ে করতে বলা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
উল্লিখিত বৈঠকটি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভা ছিল। কিন্তু সেখানে কমিটির সদস্যরা (সচিব) ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ এটি এক ধরনের ‘অনানুষ্ঠানিক’ সচিব সভায় পরিণত হয়েছে-এমন মন্তব্য করেছেন কোনো কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। যদিও মন্ত্রিপরিষদ সচিব এটি অস্বীকার করেছেন।
বৈঠকে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজনীতিবিদরা সমাধান করবে। সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হলো আইনের মধ্যে থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা। সেক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি করা যাবে না। গাফিলতি প্রদর্শন করা যাবে না। এখন সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ সময়। ৫ মাস পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেক্ষেত্রে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তারাও যেন সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া যে কোনো ফাইল ছাড়ার আগে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ে ছাড়তে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সচিব প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে যুগান্তরকে বলেন, সচিবদের উদ্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বলে, শেষ সময় সরকারের বিরুদ্ধে অনেক গুজব ঢালাপালা গজাবে। কোনো ধরনের অনির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। সব বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এই মুহূর্তে ভুলে কিছু করা যাবে না। ভুল করার সময় এখন নয়। এই মুহূর্তে কারও ভুল ক্ষমার অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে।
আপনাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তারা আরও জানান, সম্প্রতি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নকে লুটেরা মডেল অভিহিত করে খাতটি ভারত ও চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য অবাধ ক্ষেত্র উল্লেখ করায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন অতিরিক্ত সচিব এসএম হামিদুল হক এবং উপসচিব মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান। এ বিষয়টি সরকার এবং প্রশাসনকে মারাত্মক ধরনের ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছে। এ ধরনের কোনো ঝামেলা কেউ যেন সৃষ্টি না করেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়।
সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে আইন, বিধিবিধানের আলোকে নিজেদের কর্তব্যকর্মে সতর্কতার সঙ্গে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ সময় অলিখিত সচিব সভা কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে এক কর্মকর্তা জানান, আলাদা করে মিটিং করলে হয়তো আকর্ষণ আরও বেশি হবে, তাই প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির মিটিংয়ের সঙ্গে সচিবদের ডেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী এখন বিদেশ সফরে আছেন। তিনি দেশে অবস্থানকালে সব সচিব একত্রে বসা হয়ে ওঠে না। কারণ অনেক সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যেতে হয়। তাই সুযোগ বুঝে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব সভার সঙ্গে সবাই একসঙ্গে বসা হয়ে গেল।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলাদা কোনো বিশেষ সভা করা হয়নি। সচিব সভার নোটিশ সচিব সভা উল্লেখ করে জারি করা হয়। এটা সচিব সভা নয়। প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব সভা।
হঠাৎ সব সচিবকে ডেকেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব-গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাহবুব হোসেন বলেন, বিশেষ কোনো মিটিং নয়। নিয়মিত যে মিটিং, সেটিই হয়েছে। এটি আগামীকাল হওয়ার কথা ছিল, ওই সময় আমার অন্য একটি প্রোগ্রাম আছে। সেজন্য আমি মিটিংটি এগিয়ে নিয়ে এসেছি। আলাদা করে সচিব সভা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, না, না। আমাদের সাধারণ সভা হয়েছে। এটি সচিব সভা নয়, আলাদা সচিব সভা নয়। আমাদের যে কমিটি সে কমিটির সভা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। মিটিংয়ে সাধারণত যেসব বিষয় আলোচনা করি, সেটা আলোচনা করেছি। অনেকগুলো প্রস্তাব ছিল, কিছু নিয়োগবিধি ছিল, অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের বিষয় ছিল সেগুলো আমরা করেছি। মন্ত্রিপরিষদ আরও জানায়, সরকারি হাসপাতালের নিয়োগবিধি অনুমোদন দিয়েছি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবও আমরা না করিনি, আমরা বলেছি এটি আইনের মাধ্যমে যেতে হবে। আইন প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছি।
নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হয় না। আমরা আলাদা কোনো সচিব সভা করিনি। মাঠ প্রশাসনের নির্বাচনের আগে কীভাবে কাজ হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা-প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না, না, না। এ রকম কোনো বিষয় ছিল না।
মাহবুব হোসেন বলেন, প্রকল্প বাছাই করার ক্ষেত্রে, অর্থায়ন নিয়ে যেখানে ইন্টারন্যাশনাল উইন্ডোগুলো তৈরি হয়েছে, সেখানে যেন সচিবরা একটু বেশি নজর দেন, সে বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। নির্বাচনের আগে সরকারের মেগা প্রকল্প শেষ করার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, না না, ওইসব নিয়ে আলোচনা হয়নি।
কয়েকজন সচিব জানিয়েছেন, সচিব সভা হয়েছে-এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, কোনো সচিব এ কথা বলে থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করেন, আমাকে নয়।