সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ-
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ে শীতকালীন শাক-সবজি,সরিষাসহ কৃষকের ফসলি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিচ্ছেন স্থানীয় ইটভাটার মালিক।
কৃষকের চোখের সামনে নিজেদের জমির মাটি কেটে পুকুর বানাতে দেখেও ভয়ে বাধা দিতে
পারছে না
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,
জামপুর ইউনিয়নের মহজমপুর ও বস্তুল গ্রামের মধ্যবর্তী বিলে প্রায় ২৫০ বিঘা কৃষিজমি যাহাতে প্রায় ৪৬০ জন কৃষক প্রতিবছর শীতকালে বিভিন্ন রবিশস্য ও শাক-সবজি উৎপাদন করেন। শীতকালীন ফসল ওঠার পর চলে ইরি ও বোরো ধানের চাষ। উর্বরতার কারণে এই বিলে ফসলও
বেশি হয়। ভালো ফলনের কারণে কৃষি বিভাগ থেকেও কর্মকর্তারা এই বিলের ফসল পরিদর্শন করতে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন,গত দুবছর আগে এসব জমির মাটির ওপর চোখ পড়ে স্থানীয় এনবিএল ইট ভাটার মালিক কামরান ভুইয়ার। তার নির্দেশে জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেয় স্থানীয়
একটি সন্ত্রাসীচক্র। এদের মধ্যে অন্যতম হলো সন্ত্রাসী তাজুল ইসলাম,মনির,আব্দুন নুর ও —
এই চক্র গত দুই বছর ধরে ফসলি জমির মাটি
ভেকু মাধ্যমে ১০ থেকে ২০ ফুট গভীর করে কেটে সেই মাটি নিয়ে বিক্রি করছে ইটভাটায়। আর এই কাজ করছে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে।
জোরপূর্বক জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগে গত বছর স্থানীয় কৃষকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিলও করেছিলেন।
ওই সময় তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোস্তফা মুন্না মাটি কাটার ভেকু জব্দ করেন।
পরে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা সেই ভেকুটি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও এ বছর আবারও চক্রটি সরকারি দলের নেতা দাবি করে ইটভাটার মালিকের
পক্ষ নিয়ে জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কাটা শুরু করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের ক্ষেত থেকে বড় বড় গর্ত করে মাটি কাটা হচ্ছে। সেই
মাটি ট্রলিতে করে পাঠানো হচ্ছে এনবিএল ইট ভাটার মালিক কামরান ভুইয়ার কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তুল গ্রামের কৃষকরা জানান, ইটভাটার মালিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁদের জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে
যাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো ফল পাননি তাঁরা।
এসময় মহজমপুর এলাকার এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন আমার ১০ শতক জমি থেকে ছয় শতকের মাটিই কেটে নিয়ে গেছে, একটা টাকাও
দেয়নি। তাদের জোর বেশি, ভয়ে কিছু বলতে পারি না। একই গ্রামের আরেক কৃষক বলেন,আমার পাশের জমির মালিককে নামমাত্র মূল্য দিয়ে মাটি
কেটে নিয়ে যাচ্ছে। পাশের জমিতে মাটি কেটে পুকুর করায় আমার জমিও ভেঙে যাচ্ছে।
তারা বলেন, এ জমির ফসলেই আমাদের পুরো বছরের খোরাকি চলত। এখন সন্ত্রাসীরা বিলের সব মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কী উপায়
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
এবিষয়ে এনবিএল ইটভাটার মালিক কামরান ভুইয়ার কাছে জোরপূর্বক মাটি কাটার অভিযোগের
বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কৃষকদের
ন্যায্য মূল্য দিয়েই আমার লোকজন মাটি কাটছে, এতে দোষের কী? কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় নেওয়া যাবে না, এসংক্রান্ত আইন রয়েছে বলা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
এবিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল
ইসলাম ভূঁইয়া কাছে জানতে চাইকে তিনি বলেন এরা আমাদের দলের কেউ নয়। আমিই বরং প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, এদের জুলুম থেকে কৃষকদের বাঁচানোর পদক্ষেপ নিতে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
রেজওয়ান-উল ইসলাম বলেন,আমরা তদন্ত করে জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। এরই মধ্যে ইটভাটার মালিককে আমার অফিসে তলব করা হয়েছে।’ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ মাটি কাটা দু-এক দিনের মধ্যে বন্ধ করা হবে বলে তিনি জানান।