জাহিদুল ইসলাম জাহিদ
হাতীবান্ধা প্রতিনিধি
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না হাটে কৃষক ও গৃহস্থদের উৎপাদিত খাদ্যেশস্য গরু ছাগলসহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত টোল মূল্যের চেয়ে প্রায় চারগুণ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজির হোসেনকে গত ১৯ শে এপ্রিল বুধবার এক ক্রেতা অভিযোগ করায়,তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে এবং অতিরিক্ত টোল আদায়ের সত্যতা পাওয়ায় ইজারাদারকে জরিমানা না করে মৌখিক সতর্ক করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অতিরিক্ত টোল আদায় অব্যাহত রেখেছেন হাটের ইজারাদার।
সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার সিন্দুর্না হাটে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় এক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী উক্ত হাটে কোথাও টোল তালিকা প্রদর্শন করা হয় নাই। মুল ইজারাদার ব্যতিত সাবলিজ প্রদানের নিয়ম না থাকলেও,ইজারাদার প্রতিটি মালের বাজার পৃথকভাবে সাবলিজ প্রদান করেছেন। সাবলিজ গ্রহীতারা পৃথক মালামালের টোল আদায়ের জন্য বাজারে বিভিন্ন লোক নিয়োগ দিয়েছেন। তারা সরকারি নীতিমালা বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করেই নিজেদের মনগড়া হারে টোল আদায় করে চলেছেন। উক্ত হাটের পেঁয়াজ, বসুন, আলু ও মরিচ বাজারের খুচরা দোকান থেকে দোকান প্রতি টোল আদায় করা হচ্ছে ২৫ টাকা যা গতবার ছিলো ১০ টাকা, মাছের দোকান ও গরুর গোস্তের দোকানে টোল আদায় করা হচ্ছে ৮০ টাকা
পশুহাটে হাঁস,মুরগিতে ১০ টাকা, ছাগলের টোল প্রতিটি ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে যা সরকারী নির্দেশনা ছিলো ৬০ টাকা, প্রতিটি গরুতে ৬০০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে যার সরকারী চার্টে ৩৫০ টাকা,ফুটপাতের দোকানে শুধু চট বিছানোর জন্য ২০ টাকা ছাড়াও পৃথকভাবে মালামালের টোল আদায় হচ্ছে। এছাড়া ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে আমদানি-রপ্তানি খাজনার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি বিক্রিত মালামালের বিপরীতে দুই দফায় টোল আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে হাটে মালামাল বহনকারী প্রতিটি গাড়ী থেকে ৩৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে দাবী করেন ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যপারে হাট ইজারাদার মোশাররফ হোসেন জানান, এই হাটে বিগত বছরগুলোতে যে হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছিল আমি তার বেশি খাজনা আদায় করিনা। অভিযোগের বিষয়ে বললে সরাসরি দেখা করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজির হোসেন বলেন, সরেজমিনে গিয়ে টোল চার্ট টানানোর নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে টোল আদায় করা হলে ইজারা বাতিল করা হবে এবং গাড়ীতে চাঁদাবাজিসহ কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না বরং কঠোর হস্তে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন জানান, নির্ধারিত টোলের অতিরিক্ত নেয়ার কোন সুযোগ নেই, যদি কোন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ সময় বাজার মনিটরিং আরো জোরদার করা হবে বলে জানান তিনি।
উক্ত হাটের ক্রেতা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের মৃত আফসারের ছেলে কৃষক আব্দুল আলী (৪৫) জানান,হাটে গরু বিক্রি করে ৫০০ টাকা খাজনা দিলাম আবার যে আমার গরু কিনলো তার কাছ থেকে আরেক দফায় ১০০ টাকা খাজনা রাখা হয়েছে। গড্ডিমারী ইউনিয়নের আব্দুল মোতালেবের ছেলে টিপু জানান,এই হাট থেকে ছাগল কিনলাম টোল আদায় করলো ১৫০ টাকা আবার যে বিক্রি করলো তার কাছ থেকেও ৫০ টাকা আদায় করলো কিন্তু রশিদে কোন টাকাই উল্লেখ করলো না। তিনি হতাশ কন্ঠে জানান ইজারাদাদের ভাতিজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ায় আমরা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাই না, প্রতিবাদ করলেই অপমানিত হতে হয়।