অর্পিতা রানী স্টাফ রিপোর্টঃ-
লালমনিরহাট সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা খেদাবাগ নামের একটি ছোট গ্রামে মিনহাজুল ইসলাম বাপ্পির জন্ম। লালমনিরহাট সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেনিতে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করছেন তিনি। তরুণ এই শিক্ষার্থী একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবেই বেশি পরিচিত। ভলান্টিয়ারিং শব্দটা যেনো জুড়ে আছে ১৮ বছর বয়সী এই তরুণের জীবনের অলিগলিতে। মিনহাজুল ইসলাম বাপ্পির গল্প যখন শুনছিলাম, তখনও কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, নিঃসন্দেহে বলে দিচ্ছিলো নতুন কোনো কাজে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবী কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে স্বেচ্ছাসেবী প্লাটফর্মের সঙ্গে বাপ্পির যাত্রা শুরু হয়েছিলো ২০১৮ সালে। গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং একটি সুন্দর সমাজ গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী কাজে যু্ক্ত হন তিনি।
যেকোনো সংকট ও সচেতনতামূলক কাজে তার রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। মানবতার টানে ছুটে চলেছে রাস্তায়, কুঁড়েঘরে অথবা অসচেতন কোনো এলাকায়।অসচেতনতায় যখন জীর্ণ-সংকীর্ণ পৃথিবীর চারপাশ। অমানবিকতায় যখন আগামীর প্রজন্ম সুন্দর পৃথিবী হতে অবহেলিত, ঠিক তখন বাপ্পি ভাবা শুরু করে তার চারপাশের মানুষজনকে নিয়ে।সাহস বুকে নিয়ে হাজারো বাধা উপেক্ষা করে শুরু করে দেয় মানবিক কাজ।তার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও ভালোবাসার কাজ ছিল করোনার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে। করোনার তান্ডবে যখন সারা পৃথিবী অসহায়। চারদিকে স্বজন হারোনার হাহাকার, ঠিক তখন অসচেতন নগরবাসীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন এবং বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পিং করেন। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করে দিয়ে টিকা কার্ড সরবরাহ করছে নিয়মিত। তিনি যেসব কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত রক্তদাতা সংগ্রহ ও বিভিন্ন ক্লিনিক হাসপাতালে গিয়ে রক্ত ডোনেট করা,বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি করা,মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে স্কুল ও কলেজে সেমিনার এর আয়োজন,শীতকালে শিশুদের শীতকালীন পোষাক বিতরণ,সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে শীতকালীন কম্বল বিতরণ, ইন্টারনেটে কিভাবে নিরাপদ থাকা যায় তা নিয়ে স্কুল ও কলেজে সেমিনার এর আয়োজন করা,ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় ক্যাম্পিং করা, স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসায় যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে এডভোকেসি,গরু কোরবানি করা এবং নদী এলাকায় সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে মাংস বিতরণ,দুর্নীতি বিরোধী ক্যাম্পিং করা। পরিবেশ বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে মুক্তিদানের লক্ষ্য জনসচেতনতা সৃষ্টি ও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা পরিষ্কার কর্মসূচি পরিচালনা করছে টিমের সদস্যরা মিলে। শুধু সামাজিক কাজ করেই থেমে নেই তিনি। সামাজিক কাজের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার ভূমিকা রয়েছে। নাটক ও গান গেয়ে থাকেন প্রায়ই। প্রতিনিয়ত নিজের খেয়ে বনের মহিষ চড়ানোর মতো সমালোচনা উপেক্ষা করে কাজ করে চলেছে।বাপ্পি বলেন,আমি গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই এবং মানবিক একটি সমাজ গড়ার উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। একজন নাগরিক হিসেবে অপর একজনকে সাহায্য করা আমার সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি আরো বলেন,তার অক্লান্ত পরিশ্রমের মূলমন্ত্র একটাই, অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবার মাঝেই তার সুখ। তার মতে, দুঃখী মানুষের ফ্যাকাসে গালে কোমল গোলাপ পাপড়ির ন্যায় ফোকলা দাঁতের অকৃত্রিম ও আত্মতুষ্টির হাসি আমার এ কাজের অনুপ্রেরণা। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এ কাজে আরো সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন বুনি। সামাজিকভাবে সামান্য সুনজর সামাজিক ও মানবিক কাজে আমাকে আরো অনুপ্রেরণা জাগাবে।কখনো কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,স্বেচ্ছাসেবী কাজের শুরুতে আমাকে অনেকেই বিভিন্ন রকম নেতিবাচক মন্তব্য করতো। আমি এতে বিচলিত হইনি। বর্তমানে এই মানুষগুলোই এবং বন্ধুরা সবাই উৎসাহ দেয়। তাদের এই উৎসাহ এখনো ভালো কাজে সবার আগে এগিয়ে যেতে অনুপ্রানিত করে।