ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাসেল মিয়া ও তার ভাই নোমান মিয়ার বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতির মাধ্যেমে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অঢেল সম্পত্তির মাালিক হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাসেল মিয়ার নিকট নাগরিক সেবার জন্য গেলে বিভিন্ন অযুহাতে হয়রানী হতে হয়। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নাগরিক সেবা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। সেই অর্থ চেয়ারম্যানের সহযোগী মো. খোকন মিয়া ও জামাত শিবিরখ্যাত গাড়ীর ড্রাইভার মোঃ তানভীরের মাধ্যেমে তিনি আদায় করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যাক্তি বলেন, প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন করতে আমাদের এখানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাগে। এই বিষয়ে এলাকার গন্যমান্য লোকজন চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করেছিলো তখন চেয়ারম্যান বলেছেন, নির্বাচনের সময় নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছি তাছাড়া এই টাকা থেকে উপজেলায় বিভিন্ন সময় টাকা দিতে হয়।
এছাড়াও এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরো নানান দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। যেমন সার কেলেঙ্কারী, এডিপির অর্থায়নে স্কুলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে নাম ফলকে নিজের, ভাই ও বাবার নাম দেওয়া। ভূমি হস্তান্তর কর ১% বাবদ প্রায় ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ) টাকা প্রকল্প বাস্থবায়ন না করে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ। ট্রেড লাইসেন্স এ সরকারী ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়া। নিয়োগ বিহীন উদ্যোক্তা মোঃ খোকন মিয়া দ্বারা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে বয়স কমিয়ে-বাড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ স্থানীয়দের কাছ থেকে আরো নানান অভিযোগ উঠে এসেছে । কোন কোন নিবন্ধনের বয়স বাড়ানোর জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলেও জানান কয়েকজন। অনুসন্ধানে দুইটি জন্মনিবন্ধন প্রমান স্বরূপ রিপোর্টারের হাতে এসেছে । যেখানে পারভেজ মিয়া, জন্ম নিবন্ধন নম্বর- ২০০১১২১৩৩৩৮০০৭২৮৩, জন্ম তারিখ: ১৫/৬/২০০১, বহি নং- ০২ এই নিবন্ধনটি অনলাইনে থাকা সত্ত্বেও নিবন্ধন নং- ১৯৯৯১২১৩৩৩৮১১৬১০৩, জন্ম তারিখ : ১৫/৬/১৯৯৯, বহি নং- ১৪ তে অন্য আরও একটি নিবন্ধন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে করিয়া দেন এবং মোছাঃ কেয়া আক্তার, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০০৫১২১৩৩৩৮০২৬৬৫৩, জন্ম তারিখ: ১২/১১/২০০৫, বহি নং-০৬ এই নিবন্ধনটি অনলাইনে থাকা সত্বেও মোছাঃ কেয়া আক্তার, জন্ম নিবন্ধন নং- ২০০৩১২১৩৩৩৮১১৬১০৪, জন্ম তারিখ: ১২/১১/২০০৩, বহি নং- ১৪ তে অন্য আরও একটি নিবন্ধন ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে করিয়া দেন এবং বাল্য বিবাহ দানে সহযোগিতা করেছেন। স্থানীয় চায়ের দোকান ও রেস্টুরেন্টে গেলে এলাকাবাসীর মুখে গুঞ্জন শোনা যায়, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এমন ভাবে বয়স বাড়িয়ে-কমিয়ে দ্বৈত নিবন্ধন ও বাল্য বিবাহ দানে সহযোগিতা করে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান মোঃ রাসেল মিয়ার থেকেও ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে তার ভাই নোমান মিয়ার নামে। অভিযুক্ত নোমান মিয়া এর পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বিগত ৫/৬ বৎসর পূর্বে আশুগঞ্জ ফেরীঘাট সারের বস্তা টানার লেবার হিসাবে কাজ করতো। ইতিমধ্যে তারা প্রায় ৪০০ (চারশত) কোটি টাকা ও অঢেল সম্পত্তির মালিক। এই অর্থের উৎস খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে নানান দুর্নীতির অভিযোগ। বিদেশ থেকে আমদানীকৃত সরকারী সার বিভিন্ন জায়গায় গুদাম জাত করে কালো বাজারে বিক্রি করে দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল কালো টাকার পাহাড় গড়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিমত। এছাড়া আরো জানা যায় যে এই কালো বাজারের সম্পর্কে ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় সুনামধন্য পত্রিকা কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। চেয়ারম্যান রাসেল মিয়া ও তার ভাই নোমান মিয়ার সার গুদামজাত করে কালো বাজারে বিক্রি করার কারণে তারা অতিরিক্ত লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দরিদ্র কৃষক। কৃষকগন কৃষি কাজে সরকারী দামের চেয়ে কয়েক গুন অধিক টাকা দিয়ে সার ক্রয় করে কৃষি কাজ করছে। এই অবস্থায় দুদকের নিকট অভিযোগ জানালে বিষয়টি তদন্ত হওয়ার পরেও পরবর্তীতে কোন ফলপ্রসূ উত্তর পাওয় যায়নি। তাই নিরুপায় হয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল সর্বশেষ আস্থার জায়গা সরুপ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এখন স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন এবারও কি দুনীর্তির শক্ত হাতের কাছে প্রশাসনের পরাজয় হবে? তাহলে তাদের খুঁটির জোর কোথায়?