শাহিনুর ইসলাম শাহিনঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর নতুন মন্ত্রিসভায় কারা ঠাঁই পাচ্ছেন এ নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সারা দেশের মতোই লালমনিরহাট থেকে মহাজোটের ৩ হেভিওয়েট প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পর এ থেকে এবার মন্ত্রিসভায় কারা সুযোগ পাচ্ছেন এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। এই আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন ১ জন। তিনি হলেন, অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লালমনিরহাট জেলা শাখা। চায়ের কাপে এরই মধ্যে ঝড় উঠে গেছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে এই খবরটা এখন বেশ পুরোনো। লেখার শুরুতে এই আসনের এমপিদের পরিচিতি দেয়াটা উচিত। এম পি এবং আবুল হোসেন এই দুটো শব্দ যেন এই আসনে সমাথক শব্দ হয়ে গেছে। আবুল হোসেন ১৯৭০ সালে গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে এই আসনে এমপি হন। জনাব আবুল হোসেন ১৯৮৬ সালেও এরশাদ সরেকারের আমলে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আওয়ামীলীগ সংসদ থেকে পদত্যাগ করার পর প্রধান দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পাটি থেকে নির্বাচিত হন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা। এরপর তিনি এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালেও জাতীয় পাটি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের সেই কুখ্যাত ১৫ ফ্রেবুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি হন আসাদুল হাবিব দুলু। এই সংসদের মেয়াদকাল ছিলো ২/৩ দিন। একই বছর জুনে আবার নির্বাচন হলে প্রথমবারের মতো বর্তমান জাতীয় পাটি চেয়ারমান জিএম কাদের এমপি হন। ২০০১ সালে এপি ছিলেন বিএন পির আসাদুল হাবিব দুলু। এরপর ২০০৮ সালে জোটগত ভাবে জাতীয় পাটি থেকে আবার এমপি হন জিএম কাদের। ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ থেকে এমপি হন ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ আহমেদ দুলাল। তারপর ২০১৮ সালে জোটগত ভাবে জাতীয় পাটি থেকে এমপি হন জিএম কাদের। এই হচ্ছে মোটামুটি আগের সব এমপিদের বিবরন। এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। ১৯৮৬ সালে এরশাদ শাসন আমলে লালমনিরহাট সদর আসনে আবির্ভাব ঘটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের তরুন ছাত্র নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর। উচ্চাভিলাসী এই ছাত্রনেতার তখন প্রাথমিক লক্ষ্য ছিলো এমপি হবার। কিন্তু সেই সময়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পাটিতে তার যোগ্য পজিশন না থাকায় তিনি ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে অল্প কিছুসংখ্যক ভোটে পরাজিত হন। পরবর্তীকালে আসাদুল হাবিব দুলু বিএনপিতে যােগদান করেন। এরপর থেকে লালমনিরহাট সদর বা লালমনিরহাট- ৩ আসনে বিএনপি নয় আসাদুল হাবিব একজন বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেন। লালমনিরহাটের বিএনপি যে তিনি ওয়ানশ্যান শো এটা এলাকার সবাই জানেন এবং বোঝেন। ছোট্ট একটা উদাহরন দিয়ে বিষয়টা পরিস্কার করি। একটা পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে সাজানো এই আসনে তিনি তার একটা আলাদা ইমেজ দিয়ে সংগঠনকে সাজিয়েছেন।
এবার আসছি বর্তমান আওয়ামীলীগ থেকে মনোনিত প্রার্থী এডভোকেট মতিয়ার রহমান। যিনি এবার নৌকার মাঝি হয়েছেন। এ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের রাজনৈতিক জীবন বার্ণাঢ্য। ১৯৫৮ সালে ভাষার মাসে জন্ম নেয়া এই রাজনীতিবিদ ১৯৭১ সালে ৭ম শ্রেনিতে থাকা অবস্থায় বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৯ সালে সভাপতি ছিলেন। ১৯৮১ সালে জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ও ১৯৮৪ সালে সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। বহুবার তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে ঘড়ছাড়া করা হয়েছিলো। তিনি বহুদিন থেকে তিনি কলুর বলদের মতো খেটেখুটে কলুর বলদের মতো অন্যদের জন্য ভোট করেই যাচ্ছেন। এবার তার সুযোগ এসেছে নিজের জন্য ভোট চাওয়ার। একটা সময় জোটের কারনে বারবার আওয়ামীলীগ থেকে মনোনায়ন বঞ্চিত প্রয়াত আওয়ামী লীগের নেতা আবু সাঈদ দুলালের মতোই তার জন্য সাধারন ভোটারদের মথ্যে এক ধরনের সিমপ্যাথি তৈরী হয়েছে। অনেকেই এটাও বলছেন যে একবারের জন্য হলেও এই নেতার নামের পাশে এম পি শব্দটা বসুক।
এবার একটা মোটামুটি ভোটারের বিশ্লেষনে আসি। গত কয়েক বছরের ভোটের বিশ্লেষনে দেখা যায় যায় যে বড়বাড়ী, কুলাঘাট, মহেন্দ্রনগর এবং পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে বিএনপি তথা আসাদুল হাবিব দুলাল আধিপত্য বেশি। গোকুন্ডা, হারাটি,রাজপুর,আর খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে নৌকা বা জোটের আধিপত্য বেশি। মোগলহাট ইউনিয়ন আর লালমনিরহাট পৌরসভার প্রায় ফিফটি ফিফটি ভোট দুইদিকের। এভাবেই বিগত নির্বাচনে ভোটের পার্থক্য দেখা দিয়েছে।
এবার আসি এবারের মানে ২০২৪ সালের বিএনপি বিহীন নির্বাচনের এই আসনের হাল হকিকত নিয়ে। এখন হঠাৎ করেই চায়ের দোকান গুলোতে একটা কথা ঘুড়ে বেরাচ্ছে আর তা হলো মনোনায়ন পেয়েও কি মতিয়ার নৌকার মাঝি জয় লাভ করেছে মন্ত্রী হিসেবে পেলে পিছনে পড়া জেলা সদর সহ পুরো লালমনিরহাট- জেলায় উন্নয়ন এর ছোঁয়ায় ঢেকে যাবে।
লালমনিরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের লালমনিরহাট সদর আসন থেকে এম পি নির্বাচিত হয়েছিলো তেমন উন্নয়ন হয়নি । জেলায় আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান কে আওয়ামীলীগ থেকেও মন্ত্রীত্ব দেয়া প্রয়োজন।
সেক্ষেত্রে এ জেলায় আওয়ামীলীগ থেকে ৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অনেকের মতে, অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান রাজনীতিতে অনেক অভিজ্ঞ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে আছেন।
তিনি মন্ত্রীত্ব পেলে গোটা জেলায় দলের সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রাখার পাশাপাশি উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারবেন। তাই আওয়ামীলীগের মাঠ পযার্য়ের নেতা-কর্মীরা অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান মন্ত্রীত্ব দাবী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।