মাসুদ রানা রাশেদ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বাবা ছিলেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাবা যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তখন সে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। বাবার শূন্যতাকে হাহাকার মন নিয়ে শুরু হয় এক তরুণের জীবন যুদ্ধ। নিজ ঘর সামলে নিজেকে তৈরি করাটা চাট্টিখানি কথা ছিলোনা তার জন্য। নিজ পৈত্রিক ঘর ছেড়ে লজিং বাড়িতে থেকে লেখা-পড়া চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকােন্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কখনও আড়ালে থেকে আবার কখনও সামনে থেকে কাজ করে গেছেন। জীবন যে থেমে থাকবার নয় তার কিছুটা হলেও উদাহরণ তৈরি করেছেন তিনি। নিয়তিকে স্বাক্ষী রেখে অদম্য চেষ্টা করে গেছেন। ছোট বেলা থেকে ইংরেজির উপর দখল থাকায় মানুষের বাসা-বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট আর কোচিং করেই জীবনের মোড় পাল্টে যায় তার। নিজে যতটুকু জানেন সেটুকু মানুষের মাঝে বিনিময় করে গেছেন। যদিও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভূক্ত শিক্ষক নন তবুও তিনি আদর্শের তালিকায় সফল শিক্ষক। তাঁর হাতে গড়া শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই শিক্ষার্থীরা এখন দূর থেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন তাঁর জন্য। নিজে চলার পথে হতে চেয়েছেন একজন উদ্যোক্তা। যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে সেই তারুণ্যের নাম মোঃ রবিউল ইসলাম নিঝুম। সময়ের সাথে সাথে কত খড়কুটো পারি দিয়ে এগিয়ে চলতে হয় তাঁর উদাহরণ তিনি নিজেই।

মোঃ রবিউল ইসলাম নিঝুম-এঁর পিতার নাম- বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্য- কোরবান আলী, মাতা- মোছাঃ রোকেয়া বেগম। তিনি ১৯৯০ সালের ১০ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন হারাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ৩নং ওয়ার্ডে দুইবারের ইউপি সদস্য। তাই বাবার মতো চিন্তা করেন সামাজিকতা নিয়ে। ৬ভাই বোনের মধ্যে মোঃ রবিউল ইসলাম সবার ছোট। বাবার মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে বাকি ভাই বোনেরা দুরে সরে যেতে থাকে। তাই নিজেকে তৈরি করার জন্য লেখা-পড়াকে থামিয়ে রাখেননি তিনি।

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা চালিয়েছেন, এখন তিনি সরল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন। এর আগে সাকোয়ার মঞ্জিল বিএম কলেজ ও গ্র্যান্ড আকবর আইডিয়াল মাদ্রাসাতে কিছু দিন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও কনফিডেন্স কোচিং সেন্টার, ত্রিভুজ একাডেমি, সেলফ রিলায়েন্স কোচিং সেন্টার, মামুন একাডেমি, আল্টা মর্ডাণ কোচিং সেন্টার, মেরিট কোচিং সেন্টার, সাফল্য ছোঁয়া কোচিং সেন্টার ও ফ্রেন্ডস কোচিং সেন্টারে একজন দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে জড়িয়ে ছিলেন। এসবের পাশাপাশি নিজেও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কনটেস্ট কোচিং সেন্টার ও ইউনিক স্ট্যাডি হোম। তার লেখা একটি ইংরেজি বইও রয়েছে। যাঁর নাম ‘বিকাশ ইংলিশ গ্রামার এন্ড কম্পোজিশন’।

তিনি ২০০৬ সালে এসএসসি ও ২০০৮ সালে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বিএসএস পাশ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন তিনি। তার মধ্যে ‘বর্ণ পরিচয়’ কমিটির সভাপতি, ‘চন্ডীমারি’ কমিটির সাবেক সভাপতি, ‘বন্ধু’ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা, ‘সেবা নীড়’ লালমনিরহাট সদর উপজেলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এবং ‘হাসিউস সুন্নাহ মডেল মাদ্রাসার’ অভিভাবক সদস্য।

তার রয়েছে অল্প সময়ে মানুষের হৃদয় জয় করার মতো কথা বলার দারুণ কৌশল। ছাত্র জীবনে জড়িত ছিলেন লালমনিরহাট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাথে, সেই সাথে হারাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাথেও জড়িত থেকেছেন তিনি। এখন হারাটি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য।

লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর খান মার্কেট সংলগ্ন একটি ঔষধের দোকান রয়েছে। সেখানে ৪জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছুর মধ্যেই এখন সময় কাটে সেখানে। সখের বাড়ি করে সেখানে স্ত্রী, সন্তান ও মা-কে নিয়ে সুখের সংসার জীবন কাঠাচ্ছেন তিনি।