লেখকঃ সরওয়ার মোরশেদ-
সরকারী ৩৮টি সেবা পাওয়ার আশায় ধনীদের পাশাপাশি গরীব দুখী মানুষেরাও প্রয়োজনে -অপ্রয়োজনে টিআইএন সনদ খুলে নিয়েছিলেন। বিনিময়ে এখন টিআইএন মানেই বাৎসরিক দুই হাজার টাকার করের আওতায় ও করের ভয়ের মধ্যে আজীবন বন্দি হয়ে যাওয়ার পথে। জানা যায়, ২২-২৩ অর্থবছরেও শতকরা ১% লোক করের আওতায় ছিল। বাংলাদেশের মানুষ এত কম ব্যক্তি রাজস্ব (কর) প্রদান করেন তাহলে মাথাপিছু আয় এত বেশি হয় কিভাবে? দেশের এত আয় কোথা থেকে আসে? স্বভাবতই বোঝা যায় বৈদেশিক রেমিট্যান্স এবং ধনীদের প্রচুর টাকার হিসাবই গরীবের মাথায় -মাথায় ভাগ ফেলে বাংলাদেশের সকল জনগনের মাথাপিছু আয় এত বেশি দেখানোটা শুভাঙ্কের ফাঁকি নয় কি?
এখন মাননীয় আইনমন্ত্রী বলছেন ২৩-২৪ অর্থবছরে শতকরা ৮৩% ভাগ ট্যাক্স এই দেশের জনগন দিবেন আর বাকি ১৭% ভাগ ট্যাক্স বিদেশ নির্ভর হবে।তাহলে দেশের ১% লোক কি করে বেশি- বেশি ট্যাক্স দিবেন? নাকি টিআইএন ,কাজুবাদাম, কলম থেকে বর্ধিত ট্যাক্স নিয়েই ৮৩% করের হার সমন্বয় করবেন। বর্তমানে টিভি ,পত্রিকা দেখে মনে হয় সাধারন জনগন বাজেটের মানে টিআইএন, কাজুবাদাম,ও কলমের দামের আলোচনা সমালোচনা ছাড়া অন্য কিছুই দেখতে পান না।
সরকার প্রয়োজনে এনআইডি কার্ড/ টিআইএন সনদের অনুকুলে রাষ্ট্রীয় ষ্টেক হোল্ডার এর বিপরীতে সকলের নিকট থেকে শতকরা ৫% বাৎসরিক কর আরোপ করতে পারেন এবং সুষম বন্ঠন ব্যবস্থা চালু থাকলে দেশের সকল এনআইডি কার্ড/ টিআইএন সনদ ধারীরাও শতকরা ৫% বাৎসরিক কর পরিশোধ করতে আগ্রহী হবেন। দেখেন, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত সরকারী রাষ্ট্রায়ত ব্যাংকে এক লক্ষ টাকা একবার লেন-দেন করতে ৫৭/= (সাতান্ন )টাকা ব্যয় হয়। অপরদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত বেসরকারী সংস্থা বিকাশে এক লক্ষ টাকা একবার লেন-দেন করতে ১,৮৫০/= (এক হাজার আটশত পঞ্চাশ) টাকা ব্যয় হয়। দৈনিক এক বারের টাকা বিকাশে কতবার লেন-দেন হয় এবং কত লাভ জনগনের নিকট থেকে আদায় করা হচ্ছে? মহান সরকার ভেবে দেখবেন কি? নিয়ম বহিঃভুত বিকাশ প্রকাশ্যে সুদের ব্যবসা করে যাচ্ছেন। সরকারকে জানিয়ে এসব কাজ করছেন নাকি সরকার লভাংশ পায়? এখানে জনগণ পুরোপুরি অসহায়। দয়াকরে সরকার আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিবেন কি? এদিক থেকে ভাবলে টিআইএন সনদদের ২,০০০/= টাকার ট্যাক্স প্রদান করা জনগনের জন্য কিছুই না।
কিন্তু কথা হল, দেশের সরকারের সরাসরি সুবিধা ভোগীর পরিমান যদি শতকরা ১০ ভাগ হয় এবং দূনীতি ও অন্যান্য পাচার কারীদের টাকা ফেরৎ আনতে পারলে আগামী (০৫) পাঁচ বছর জনগনের নিকট থেকে কোন ট্যাক্স নেওয়াই লাগবেনা। দেশের জনগন আইনের বাইরে নয়, তবে সরকারের সরাসরি সুবিধা ভোগীদের বাঁচার বাজেট সাধারন জনগণ দেখতে চায় না। নারী ও বৃদ্ধদের টিআইএন সনদ থাকা সত্বেও যদি নিয়মিত আয় নাই। তাহলেও কি নারী ও বৃদ্ধদের টিআইএন সনদ আছে মানে ২,০০০/- কর দিতেই হবে? এবিষয়ে সরকারকে আরো ভেবে দেখা দরকার।
সরকারের দ্বৈত নীতিতে যেমন সরকারী, বেসরকারী শিক্ষক, সকল চাকুরীজীবির ১৬,০০০/- টাকার মূল বেসিক হলেই টিআইএন সনদ খোলা বাধ্যতামুলক, আবার সরকারের ৩৮ প্রকারের সুবিধার আবেদন করতে চাইলে সেখানেও টিআইএন সনদ জমা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। অর্থাৎ একদিকে সকলকে টিআইএন সনদ খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে। অপরদিকে, সকল জনগনের নিকট থেকে টিআইএন সনদ বাবদ বাৎসরিক কর ধার্ষ করার ব্যবস্থা হচ্ছে। যাহা বৈষম্য বলেই আমার মনে হয়। সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আয় করতে চাইলেও তার কিন্তু বৈধ্য এনআইডি কার্ড/ টিআইএন সনদ থাকতে হচ্ছে।সব মিলিয়ে সরকারকে রুগ্ন কারিগরি শিক্ষার বাজেট নিয়ে কথা বললেও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষায় ছিটা-ফাটা টাকায় চলা অচল শিক্ষার নাম কারিগরি শিক্ষা হতে পারে না।যাহা কোন মতেই ২০৪০ সালে ৪০% কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্ঠা সম্পূর্ণ বিফলে যেতে পারে।সরকার কারিগরি শিক্ষায় নজর না দিলে দিনের শেষে দেশে কর্ম ভিত্তিক বাতি জ্বলবে না।
সরওয়ার মোরশেদ মোড়ল
(কারিগরি শিক্ষক)
কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট।
মোবাইল: ০১৭১৪-৩৩৩৫৮৭ ( ফেসবুক: Sarwar Morshed )
ই-মেইল: smorshedmoral@gmail.com